সব

হেমন্তের হাতছানি ! 

হেমন্তের হাতছানি ! 

হেমন্তের হাতছানি ! 

এ বছরটা মনে হয় গরমের বছর। পুরো বর্ষাকালটা গেল কাঠফাটা গরম। সেই ক্লাস ফোর-ফাইভ থেকে পড়ে আসছি জলবায়ুর পরবর্তনে কি হবে? তাপমাত্রা বাড়বে, হিমালয়ের বরফ গলে বাংলাদেশ নামক  ব-দ্বীপ তলিয়ে যাবে। তখন শিশু মনে অনেক ভিতি কাজ করলেও ভাবতাম কি আর হবে? আমার মত সকলেই হয়ত এসব ভেবেই অবলীলায় আমরা সবাই গাছ কেটেছি, খাবার ঠান্ডা রাখার জন্য রেফ্রিজারেটর আর ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য এসি ব্যবহার করেছি। এখন তো এগুলো না থাকলে আমরা হাসফাস করি, ফলাফল সিএফসি গ্যাস নিঃসরন, বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, আর পুরো বছর জুড় গরমে হাসফাস করা, যেটা এ বছরই খুব ভাল করে টের পেয়েছি।

২০২২ সালে সারা বছর বৃষ্টি হল না, ভরা শ্রাবনও বৃষ্টিবিহীন। বৃষ্টির দেখা মিলল সেপ্টেম্বর থেকে। বেশ কয়েকটি নিম্নচাপের কারনে এই অক্টোবরেও অকাল বর্ষণ। অথচ ছেলেবেলায় এই সময়টা শীতের আগমনী বার্তা দিত, সন্ধ্যায় হিমহিম ভাব, দূরের মাঠে হালকা কুয়াশায় অন্ধকার নেমে আসার আগেই ঝাপসা হয়ে আসত চারপাশ, লোডশেডিংয়ে হারিকেনের টিমটিমে আলোয় সন্ধ্যার পর পড়তে বসতাম আমরা। আর নভেম্বর মানেই গায়ে সোয়েটার উঠে যাওয়া। আমার জন্য মায়ের হাতে বোনা কমলা রঙের উলের সোয়েটারটা এখনও একমাত্র স্মৃতি হয়ে আলমারিতে আছে, মাঝে মাঝে তা থেকে মায়ের আদরের  উত্তাপটা অনুভব করার চেষ্টা করি।

আমার ছেলেবেলার প্রথম অংশ মফস্বল শহর আর পরের অংশ ঢাকায় কাটানোার কারনে গ্রামের সাথে সম্পর্ক কম, তবে কয়েকবার ফাইনাল পরীক্ষার পর দাদাবাড়ী গিয়েছি, তখন ডিসেম্বরে পরীক্ষা শেষ হত, হাড়কাপানো শীত। এখন যেমন গ্রামগঞ্জেও নরম তুলতুলে কোরিয়ান বা সৌদি কম্বল বলে চালিয়ে দেয়া চাইনিজ কম্বল বিক্রি হয়, তখন ঐ কোমল বিড়ালের লোমের মত পেলব কম্বল শুধু ধনীদের ঘরেই থাকত, বিদেশ থেকে আত্মীয়দের পাঠানো। গ্রামে গেলে একসাথে অনেকজন, অন্য আত্মীয়রাও একসাথে আসায় কে কোথায় ঘুমাবে ঠিক নেই, ভাগ ভাগ করে একেক দলকে পাঠানো হত একেক চাচাদের ঘরগুলোতে। রাতে ঘুমানোর সময় বড় বিড়ম্বনা ছিল লেপের মত ভারী সব কাথা, সারাদিন বিছানার উপর অজগরের মত কুন্ডলী পাকিয়ে পরে থাকা সেই কাথার ওজনও অজগরের মতই ভারী আর হিমশীতল। কাথা আর কি গা গরম করবে বরং নিজেদের শরীরের উত্তাপ দিয়েই কাথা কে গরম করতে করতে অর্ধেক রাত চলে যেত, আর নিজের বাসায় শীতকালে দুই সপ্তাহে বা মাসে মায়ের উপর ঝড় চলত লেপের কাভার, মশারী সব ধুয়ে রোদে শুকানোর। শিমুল তুলার লেপ শীতের দুপুরের রোদে দিয়ে মুচমুচে করা হত, ছুটির দিন দুপুরে ভাত ঘুমের সময় সেই লেপের যে উত্তাপ তা আর কোথায় পাবো? এখন তো এই অক্টোবরেও এসি ছেড়ে পাতলা কাথা গায়ে দিতে হয়।

ময়মনসিংহ আসলাম দুই সপ্তাহ হতে চলল, শহরে দুই তিনবার গিয়েছি। এখানকার রাস্তাগুলো সরু, অধিকাংশই দুই লেনের। অনেক মানুষ, শহর জুড়ে রেলক্রসিং আর অটোর কারনে যানজট লেগেই থাকে। এখানে পরিচিত কেউ নেই। পুলিশ সুপার থাকতে যেরকম অবাধে ঘুরতাম এখানে পাবলিক ফাংশন কম থাকায় অফিস আর বাসাতেই সময় কাটে। তাই প্রতিদিনের রুটিন সন্ধ্যার পর ট্রাউজার, টি শার্ট, কেডস পরে রেডি হয়ে হাটার আয়োজন করা। 

ইদানিং গরমটা একটু কম, শরতের বিদায়ে হেমন্ত হাতছানি দিচ্ছে, হাটার সময় সেটা কিছুটা হলেও টের পাই। একটা হালকা হিমহিম মিস্টি বাতাস ছুয়ে দেয়। বাসার সামনের সবুজ ঘাসগুলোতে অকাল বর্ষণের সাক্ষী বৃষ্টির পানি, বাংলোর চারপাশের উজ্জল বৈদ্যুতিক আলোয় মুক্তার মত জ্লজ্বল করে। দুই দিন আগে পূর্নিমা গেল। ভরা চাদের আলোয় আমাদের পুরো কমপ্লেক্স যেন অবাক জোছনায় বিলীন। বারবার চেষ্টা করেছি ছবিতে ধরে রাখতে। চাঁদের সে রুপ, আকাশের সে ক্ষণে ক্ষণে পাল্টে যাওয়া চেহারা ধরে রাখা যে সহজ নয় সেটা টের পেয়েছি তোলার পর ছবি দেখে। কয়েকদিন আগেও দশ মিনিট হাটলে শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার হত, নিঃশ্বাস দ্রুতলয়ে উঠানামা করত। এই সময়টায় সেটা কম। হাটা শেষে বসলে মনে হয় ঘামের সাথে সাথে জলীয় বাস্পেও মাথা ভিজে গেছে। এতটু জিরোতে গিয়ে বসে মনে পড়ে হেমন্ত কে প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশের চেয়ে ভাল করে আর কেউ তুলে ধরতে পারেনি-

“প্রথম ফসল গেছে ঘরে/হেমন্তের মাঠে মাঠে ঝরে শুধু শিশিরের জল;/অঘ্রানের নদীটির শ্বাসে/হিম হয়ে আসে/বাঁশপাতা-মরা ঘাস-আকাশের তারা!/বরফের মতো চাঁদ ঢালিছে ফোয়ারা!/ধানক্ষেতে-মাঠে/জমিছে ধোঁয়াটে/ধারালো কুয়াশা”

লেখক-

মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান, বিপিএম 

অধিনায়ক, র‍্যাব-১৪ (অতিরিক্ত ডিআইজি)

ময়মনসিংহ

আপনার মতামত লিখুন :

তুই মানে – ইমি

তুই মানে – ইমি

গল্প কথায় ইউ‌রো‌পের ই‌তিহাস: কি‌স্তি ১১

গল্প কথায় ইউ‌রো‌পের ই‌তিহাস: কি‌স্তি ১১

গল্প কথায় ইউ‌রো‌পের ই‌তিহাস: কি‌স্তি ৮

গল্প কথায় ইউ‌রো‌পের ই‌তিহাস: কি‌স্তি ৮

হেমন্তের হাতছানি ! 

হেমন্তের হাতছানি ! 

“শিশুদের সুপ্ত বিকাশ হোক বাঁধাহীন”

“শিশুদের সুপ্ত বিকাশ হোক বাঁধাহীন”

অনন্যা – আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী

অনন্যা – আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: PabnaTimes24.Com

সম্পাদক: মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান
০১৭২১৭৪৭৯৬৫
অফিসঃ ৪র্থ তলা, রানা শপিং কমপ্লেক্স , পাবনা প্রেস ক্লাব গলি, আব্দুল হামিদ রোড, পাবনা-৬৬০০
pabnatimes24.com@gmail.com